জিমের ২৭ শিক্ষা

আমি প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত জিম করছি। এই নিয়মিত শব্দের অর্থ হলো, এই দুই বছরে জিমে বড় কোন গ্যাপ হয় নি। হাতে গোনা কয়েকবার এক সপ্তাহ গ্যাপ হয়েছে কোন কারণে। চেষ্টা করেছি তিন দিন যেন গ্যাপ না হয়। দুই বছরের হিসাব করলে দেখা যাবে গড়ে আমি জিমে গিয়েছি সপ্তাহে ৪/৫ দিন করে।

আমার জিমের ফিলসফি অন্যদের চাইতে একটু আলাদা বলে আমি মনে করি। জিমের জন্য আমি না, আমার জন্য জিম – এই নীতিতে। এর ফলে, জিমের জন্য সব নিয়ম না মেনে নিয়মকে আমার মত করে মানিয়ে নেয়াটাই আমার লক্ষ্য থাকে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ঘুমের কথা। জিমের জন্য তথা মাসল তৈরির জন্য রাতে ঠিক সময়ে ঘুমানো খুব গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু রাতেই আমার ক্রিয়েটিভ কাজ বা অন্যান্য লেখাপড়া বেশি হয়, বা এই সময়ে কাজ করতে আমি এঞ্জয় করি। তাই, আমি জিমের নিয়মটি মানি নাই। এই দুই বছর সময়ে ৪ টা ৫ টার আগে ঘুমিয়েছি কয়েকদিন সম্ভবত। এতে অবশ্যই মাসল বিল্ড আপে খারাপ প্রভাব পড়েছে, কিন্তু যেহেতু জিমের জন্য আমি না, আমার জন্য জিম, তাই এতে আমার কোন অসুবিধা নাই।

এই দুই বছরের জিম থেকে লাইফ বিষয়ে কী শিখলাম তা নিয়ে এই লেখাটি। শুরু করা যাক,

১। অজুহাত বা এক্সকিউজ যারা দেয়, তাদের দিয়ে কাজ হয় না। এইভাবে বলা যায় মানুষ দুই ধরণের, এক যারা অজুহাত তৈরি করে, দুই যারা কাজ করে। যারা দ্বিতীয় ধরণের তাদের যেহেতু কাজই লক্ষ্য তাই তারা এইদিকেই ফোকাসড থাকে।

২। একশন ড্রিভেন হওয়া দরকারী।

৩। অধিকাংশ মানুষ বিভিন্ন ভালো জিনিস চায় কিন্তু এর জন্য যে কাজ করতে হয়, কিছু নিয়ম মানতে হয় বা কষ্ট করতে হয়, সেটা করতে চায় না। এই সমস্যাটা মানুষের লাইফের এক প্রধান সমস্যা। কোন জিনিস কিনতে গেলে মানুষ এই সমস্যায় পড়ে, এক- সে টাকা দিবে এজন্য তার পেইন হয়, আবার দুই, সে ঐ পণ্য বা সেবা চায়। তখন সে একটা কগনিটিভ ডিজোন্যান্সে ভুগে।

৪। কোন কাজে কনসিস্টেন্স থাকতে বাইরের মোটিভেশন কাজ করে না। কনসিস্টেন্স থাকতে হলে লাগে ইনার মোটিভেশন, যার জন্য দরকার যে কাজটি আপনি করছেন সেই কাজের প্রসেসটাকে এঞ্জয় করা, মিনিংফুল ভাবে করা। মিনিং না থাকলে মোটিভেশন কাজ করবে না। সাকসেস একটা অল্প সময়ের বাস্তবতা। কিন্তু সাফল্যের জার্নিটা দীর্ঘ। জিমের প্রতিটা দিন যার কাজে ভালো বডি তৈরি করে ছবি তোলা বা অন্যের প্রশংসা পাবার মত এঞ্জয়বেল না তার পক্ষে কন্টিনিউ করে যাওয়া অসম্ভব। যাদেরই ভালো বডি আছে তারা সবাই জিমকে এঞ্জয় করে।

৫। রেসপেক্ট পাওয়ার মূল্য হলো পরিশ্রম ও নিজেকে রেসপেক্টের যোগ্য করে গড়ে তোলা।

৬। ভালো জিনিস কম্পাউন্ড ইফেক্ট।

৭। ইজি চয়েজ হার্ড লাইফ, হার্ড চয়েজ ইজি লাইফ।

৮। একদিন একজন লোক কেবল বার দিয়ে চেস্ট মারবেন। সেই লোকই একদিন ৫০ কেজি দিয়ে চেস্ট মারবেন।

৯। এক্সারসাইজ সিম্পল। সব কিছু শিখতে হবে এবং যা সিম্পল তাই শেষ পর্যন্ত গৃহীত হবে।

১০। কোন কিছু শুরু করার আগে তার সম্পর্কে বেশ ভালো ভাবে জেনে নেয়া উচিত। এবং কন্টিনিউয়াসলি জানা অব্যাহত রাখা উচিত। এটি মারাত্মক সহযোগিতা করে। বেসিক সম্পর্কে যত ভালো জ্ঞান থাকবে ততো নিয়ম নিজের মত করে বদলে নেয়া যাবে। এক্সারসাইজ ও নিউট্রিশনের তথ্য নিয়মিত আপডেট হয়।

১১। ভালো জিনিস সময় নেয়। দ্রুত পাওয়ার ইচ্ছা বা ইনস্ট্যান্ট গ্রাটিফিকেশন খারাপ।



১২। মানুষ যা (বেনিফিশিয়ারি জিনিস) নিজে করতে পারে না, তা অন্যকে করতে দেখলে ডি মোটিভেট করতে চায়। এই ডিমোটিভেশন সরাসরি হবে না, পরোক্ষ মন্তব্য হয় বেশিরভাগ। কাছের বন্ধুবান্ধবরাই করতে পারে, বিবর্তনীয় সাইকোলজি অনুযায়ী এই ডি মোটিভেট করা তার একটা সারভাইভাল বা মেটিং স্ট্র্যাটেজির অংশ।

বিবর্তনীয় দিক থেকে মানুষের লক্ষ্য দুইটা – মেটিং ও সারভাইভাল। সাব কনশাসলিও কেউ যদি অনুভব করে আপনি এই দুই জায়গায় এগিয়ে যাচ্ছেন তাহলে সে ডি মোটিভেট করতে পারে। সচেতনে সব সময় না, তার কাছে মনে হবে সে এমনিই বলছে।

এসব জিনিস ইগনোর করতে হবে, মানুষের সীমাবদ্বতা জ্ঞান করে।

১৩। যে বাঁচতে চায় না তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করা ভুল। যে জানতে চায় না তাকে জানানোর চেষ্টা ভুল। জিমে দেখা যায় অনেকে ভুল এক্সারসাইজ করতেছে। কিন্তু দেখা মাত্রই আপনি সঠিকটা শেখাতে যাবেন না। কারণ, এক হয়ত সে আপনাকে মানবে না। দুই, সে হয়ত অপমানিত বোধ করবে ইগোজনিত কারণে, বেশিরভাগ মানুষই এমন। তাকেই শেখান যে শিখতে চায় ও আগ্রহী। সে আপনাকে প্রকৃত রেসপেক্ট করবে এর জন্য।

১৪। সিনিয়রিটি বা যাদের বডি আছে তাদের প্রতি জিমের অন্যান্য বেশিরভাগ সদস্যের রেসপেক্ট থাকে। এই রেসপেক্ট দরকারী কম্যুনিটির জন্য। এটি বন্ডিং ও শৃঙ্খলা তৈরি করে। যে জিমে এই জিনিস নাই তার পরিবেশ হবে খারাপ। আমার দেখা সব জিমেই এটি থাকে।

১৫। সহযোগিতা ও সাহায্য জিমে অপরিহার্য। আপনার যখন বডি থাকবে, তখন অনেকে টিপস চাইবে, এক্সারসাইজ কেমনে করতে হয় দেখিয়ে দিতে বলবে। এটি জিমের রেসপেক্ট। এসব ক্ষেত্রে বিল্ডাররা আন্তরিক সাহায্য করে থাকেন, ও ব্যাপারটা এঞ্জয় করেন। যারা সাহায্য নেয় তারা কৃতজ্ঞতা ও রেসপেক্ট প্রকাশে দ্বিধা করেন না। এসব দিক থেকে জিম অনেস্ট পরিবেশ।

১৬। স্ট্রেংথ মেটারস।

১৭। জিমে ফিজিক্যাল ট্রেনিং বেশিরভাগই হয় মেন্টাল ট্রেনিং। মাইন্ড মাসল কানেকশন না থাকলে মাসল তৈরি হবে না।

১৮। নিউট্রিশন খুব গুরুত্বপূর্ন। মাসল বাড়াতে চাইলে ০.৮ গ্রাম পার পাউন্ড বডি ওয়েট, এবং বেশি ক্যালোরি। ফ্যাট কমাতে চাইতে ০.৮/১ গ্রাম প্রোটিন পার পাউন্ড বডি ওয়েট এবং কম ক্যালোরি। এই সিম্পল রুল।

১৯। কম্পাউন্ড এক্সারসাইজ বেস্ট।

২০। ভি শেইপ বডি করতে চাইলে অবশ্যই পুল আপকে গুরুত্ব দিতে হবে।

২১। লাইফের শিট ও স্ট্রেস, মানুষের নাটংকীপনা, চালাকি ইত্যাদিতে আসা বিরক্তি ঘামের সাথে ঝরিয়ে ফেলতে জিম।

২২। এটি ইউ ভার্সেস ইউ গেইম।

২৩। এনভি, জেলাসি ফর লুজারস।

২৪। আপনাকে কোথাও শুরু করতে হবে। হয়ত পাঁচ কেজি দিয়ে। এতে লজ্জ্বার কিছু নেই। জিম এমন জায়গা যেখানে আপনি খালি বার দিয়ে এক্সারসাইজ করলেও কেউ হাসবে না। কারণ আজ যে অনেক ওয়েট দিয়ে মারছে সে আপনাকে দেখলে তার মনে পড়বে এই তো, কয়েক বছর আগে সেও এরকম ছিল।

২৫। জিমে গেলে একটা প্রাথমিক নিয়ম হল, ইগো দরজায় রেখে যাবেন। ইগো নিয়ে গেলে পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারবেন না। কোন এক্সারসাইজ না বুঝলে সাথে সাথে ট্রেইনারের সাহায্য নিন। ট্রেইনারের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদের কথা শুনুন ইগো সরিয়ে রেখে। বা যাদের বডি আছে, আপনি এডমায়ার করছেন তাদের কাছে টিপস দরকার মনে হলে ইগো সরিয়ে রেখে গিয়ে চান।

অনেকে ইগোজনিত কারণে অন্যদের দেখাতে গিয়ে বেশি ওয়েট দিয়ে মারতে যান। এতে বিপদ ডেকে আনেন।

লক্ষ্য কী তা মাথায় রাখবেন। আপনি মাসল তৈরি করতে গেছেন। এটির জন্য সুইটেবল ওয়েট ব্যবহার করবেন। এখানে কাউকে দেখানোর কিছু, ইগো মারানোর কিছু নাই। এগুলি কেউ গুনায় ধরবে না।

২৬। জিমে অহেতুক কথা বলা প্রমাণ করে আপনি আপনার মূল কাজে ফোকাসড না।

২৭। ওয়েট ব্যবহার করার ঠিক জায়গায় রাখা জিমের ভদ্রতা ও রুল। এটি দায়িত্ববোধ শিক্ষা দেয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *