আদিত্য রায়

মাসল কীভাবে বাড়ে?

বডির তিনটা জিনিস দরকার তার শক্তি বা মাসল বাড়ানোর জন্য। এক- স্ট্রেস অর্থাৎ মাসলে প্রেশার। দুই- রিকভার করার জন্য সময়। তিন- মানিয়ে নিতে পারা।

আমরা যখন বিভিন্ন ওয়েট নিয়ে এক্সারসাইজ করি যখন মাসলে প্রেশার দেই। এই প্রেশার দিয়ে তাকে সংকেত দেয়া হয় যে পরবর্তীতে একই ধরনের প্রেশার আসলে যেন সে তা নিতে পারে, এইজন্যই মাসল আরো বেশী ওয়েট নেবার জন্য তৈরী হতে থাকে। কিন্তু, মাসলকে রিকভারির জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হয়, এই সময় না দিলে তার গ্রোথ সীমিত হয়ে পড়ে।

মানুষের সে সিস্টেম তা হচ্ছে নিউরোমাসকুলার। অর্থাৎ, মস্তিষ্ক আমাদের সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু, এবং বডি স্ট্রাকচারে আছে মাসল টাসল ইত্যাদি। ওয়েট ট্রেনিং এর মাধ্যমে মস্তিষ্ককে সংকেত দেয়া হয় যাতে সে মাসলকে বর্ধিত করে।

দেখবেন বিভিন্ন ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত এলাকার মানুষের বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হয়ে থাকে। প্রত্যন্ত গ্রামের একজন কৃষক ছেলে কাঁধে ধানের চারা নিয়ে দীর্ঘ রাস্তা হেঁটে যেতে পারে, এবং এটা তার নিয়মিত কাজ হওয়ায় তার পায়ের মাসল শক্ত হয়ে উঠবে। শহুরে কোন ভালো ছাত্র, যে খেলাধুলাও করে না, খালি ভিডিও গেইম খেলে, তার ক্ষেত্রে এমন হবে না। কারণ ভিডিও গেইম যে খেলে তার মস্তিষ্কে সংকেত যায় নি বেঁচে থাকার জন্য মাসলকে বাড়াতে হবে, স্ট্রেংথ বাড়াতে হবে। ফলে তার ফ্যাটই জমবে।

এক্সারসাইজের মাধ্যমে বডিকে এই মেসেজ দেয়া হয়, আমাদের এই ধরনের লোডকে ট্যাকল দিতে হবে, সুতরাং মাসল দরকার, স্ট্রেংথ দরকার।

এই সংকেত অনুযায়ী বডি মানিয়ে নিতে শুরু করে। প্রথম সপ্তাহে যিনি খুবই অল্প ওয়েট দিয়ে বেঞ্চ প্রেস মেরেছিলেন দেখা যায় কয়েক মাসের মধ্যে তিনি অনেক ওয়েট বাড়াতে পারছেন। প্রথম যিনি একটাও পুল আপ মারতে পারেন নি, দেখা যায় কয়েক মাসের মধ্যে তিনি তিন চারটা মারতে পারেন। এভাবে বডি মানিয়ে নেয়া শুরু করে। কিন্তু এই মানিয়ে নেয়ারও সীমাবদ্বতা আছে। একসময় গিয়ে শেষ হয়। আপনি সপ্তাহে দশ কেজি ওয়েট বাড়াতে থাকলে প্রতি সপ্তাহেই বাড়তে থাকবে এমন নয়। চল্লিশ বা আশি কেজিতে বা অন্য একটা জায়গায় গিয়ে আপনাকে থামতে হবে কারণ এর বেশী ওয়েট বডি আর নিতে পারবে না।

আমাদের মাসলে শক্তি বা স্ট্রেংথ আসে তিন ধরনের টেনশনে।

এক- কনসেন্ট্রিক টেনশন

এটা হচ্ছে মাসল যখন প্রেশার পেয়ে আকারে ছোট হয়। যেমন, আপনি পুশ আপ দিতে গেলে যখন নিচে যান তখন চেস্টের মাসল ছোট হয়। বাইসেপ কার্ল এক্সারসাইজের সময় ডাম্বেল তুলেন যখন তখন মাসল আকারে ছোট হয় কিন্তু উচু হয়। পুল আপ এক্সারসাইজের সময় যখন উঠেন তখন বাইসেপ ছোট হয়, মাসলে চাপ পড়ে। এইসব চাপই কনসেন্ট্রিক চাপ।

দুই- ইসেন্ট্রিক টেনশন

এটা হচ্ছে যখন মাসল প্রশস্ত হয়, যেমন বাইসেপ কার্ল এক্সারসাইজের সময় যখন ডাম্বেল নিচে নামাচ্ছেন, তখন মাসল প্রশস্ত হয়। বা পুশ আপের সময় যখন উঠেন তখন চেস্টের মাসল প্রশস্ত হয়। বা পুল আপের সময় যখন নামেন তখন বাইসেপের মাসল প্রশস্ত হয়। এসব হচ্ছে ইসেন্ট্রিক টেনশন।

তিন- আইসোট্রপিক টেনশন

যখন মাসলের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন হয় না কিন্তু টেনশন অনুভূত হয়, যেমন যখন আপনি দেখানোর জন্য বাইসেপ ফুলানোর চেষ্টা করলেন। তখন বাইসেপে যে টেনশন অনুভূত হয় তা আইসোট্রপিক টেনশন।

মাসলে বিভিন্ন ধরনের টেনশন
মাসলে বিভিন্ন ধরনের টেনশন

কোন এক্সারসাইজ রেপে এক অংশে কনসেন্ট্রিক প্রেশার দেয়া হয় মাসলে আবার আরেক অংশে দেয়া হয় ইসেন্ট্রিক প্রেশার। যেমন, বাইসেপ কার্লে ডাম্বেল উপরে নিলে কনসেন্ট্রিক প্রেশার পড়ছে, আর ডাম্বেল নামালে মাসলে পড়ছে ইসেন্ট্রিক প্রেশার। এই দুই ধরনের প্রেশারই মাসল গ্রোথ এর জন্য দরকারী, যদিও এখানে তোলাটা অর্থাৎ কনসেন্ট্রিক প্রেশার দেয়াই বেশী কঠিন এবং এটাই বেশী কাজ করে মাসল গ্রোথের পিছনে।

 

 রেপ রেঞ্জ- হাই এবং লো

 

রেপের রেঞ্জ কেমন হওয়া উচিত মাসলকে ভাঙ্গার জন্য? বডির মাসলে আমরা নির্দিষ্ট পদ্বতিতে স্ট্রেস বা চাপ দেই তখন আমাদের মাসল টিস্যু মাইক্রোস্কোপিক ভাবে ভাঙ্গে। এই ভাঙ্গা টিস্যু সাইটোকাইন নামে এক বস্তু নিঃসরণ করে যা আমাদের দেহকে সিগনাল দেয় এই ভাঙ্গা টিস্যুকে ঠিক করার জন্য। আমরা যখন রেস্ট নেই তখন এই ভাঙ্গা টিস্যু ঠিক হতে থাকে, এবং প্রতিবার ঠিক হবার সময় সে কিছুটা করে বাড়ে। এভাবেই মাসলের গ্রোথ হয়। তবে এর জন্য ঠিক নিউট্রিশন, হরমোন ইত্যাদিরও দরকার পড়ে।

সুতরাং, রেপ রেঞ্জ এমন হতে হবে, এবং এমন ওয়েটে হতে হবে যাতে আমাদের মাসল ভাঙ্গে।

লো রেপ রেঞ্জ হচ্ছে ১ থেকে ৬ বার করে।

হাই রেপ রেঞ্জ হচ্ছে ৭ থেকে ২০ বার করে।

সাধারণত রেপ রেঞ্জ হয় হাই, অর্থাৎ ১২ থেকে ২০ বারর করে, মাঝখানে ২০/৫০ সেকেন্ড রেস্ট।

লো না হাই রেপ রেঞ্জ, কোনটা ভালো?

সাইন্টিফিক্যালি, বডির স্ট্রেংথ এবং মাসল গ্রোথ বাড়ানোর জন্য দুইটাই।

প্রথমে নতুন হিসেবে একজন লো রেপ রেঞ্জ দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং সময়ের সাথে সাথে তার স্ট্রেংথ বাড়লে তিনি রেপ রেঞ্জ বাড়াতে পারেন।

2 thoughts on “মাসল কীভাবে বাড়ে?”

  1. Pingback: Roar বাংলা মনোহর আইচ: বাংলাদেশের হারকিউলিস

  2. Pingback: Roar বাংলা মনোহর আইচ: একজন বাঙালী হারকিউলিসের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *