আরামের সাথে আমাদের এক প্রকার সম্পর্ক আছে, আমরা আরাম চাই কেবলই। কিন্তু এই আরাম বা সুখ এর সাথে আমাদের সম্পর্ককে পুননির্মান জরুরী, নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য এবং জীবন ও জগতকে আরো ভালোভাবে বুঝার জন্য।
নিয়ন্ত্রিত ভাবে নিজেদের উপর অ-আরামদায়ক পরিস্থিতি তৈরী করার মাধ্যমে আমরা আরামের সাথে আমাদের সম্পর্ক পুননির্মান করতে পারি।
স্টোয়িক দর্শনের এক মূলকথা হলো সেলফ কন্ট্রোল বা আত্মনিয়ন্ত্রণ। এর জন্য আরামের সাথে সম্পর্ক পূননির্মান জরুরী, যেহেতু আরাম বা সুখের আহবানেই একজন ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে অ-আরামদায়ক অবস্থায় ফেলে একজন ব্যক্তি নিজেকে ভবিষ্যতের অ-আরামদায়ক পরিস্থিতির জন্য তৈরী করে নিতে পারেন বলে স্টোয়িকেরা মনে করতেন। যেমন, আপনি প্রতিদিন সকালে চা খান। চা না খেলে আপনার চলেই না। শরীর ম্যাজম্যাজ করে। এভাবে চলতে চলতে আপনি আসলে এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে একজন স্টোয়িক দার্শনিক আপনাকে উপদেশ দিবেন আগামীকাল সকালে চা খাবেন না।
সেই সকালে আপনি ঘুম থেকে উঠলেন। চা খাবার তথা পান করার জন্য অস্থির হবেন, কিন্তু যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেন, তবে আপনার ইচ্ছাশক্তি জয়যুক্ত হবে, এবং শক্ত হবে।
নিজেকে ইচ্ছাকৃত অ-আরামদায়ক পরিস্থিতিতে ফেলার আরো কিছু উপায় স্টোয়িক দার্শনিক ভাবতেন পারেন। যেমন, ফ্লোরে ঘুমানো, সারাদিন না খেয়ে থাকা। চেইন স্মোকার হলে একদিন সিগারেট না খেয়ে থাকা ইত্যাদি।
আরেকটি চমৎকার ব্যাপার, স্টোয়িক প্র্যাক্টিস হলো এক্সারসাইজ। এক্সারসাইজের কয়েকটি স্টোয়িক দিকঃ
এক- এটি দেহ ও মনকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। আর সুস্থ দেহমন অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট ও যৌক্তিক চিন্তা করতে পারে।
দুই- এক্সারসাইজ একটা মানসিক স্ট্রেংথ তৈরী করে।
যারাই এক্সারসাইজ করেছেন নিয়মিত তারা জানেন যে কতোটা ইচ্ছাশক্তির উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ দরকার হয় প্রতিদিন তা চালিয়ে যেতে। কারণ এক্সারসাইজ বা ওয়েট ট্রেইনিং কোন আরামদায়ক জিনিস নয়। আপনাকে ভারী ভারী সব বস্তু তুলতে হবে নামাতে হবে নির্দিষ্টভাবে। আপনার মাসলে স্ট্রেস পড়বে, এবং একসময় ব্যথাও হতে পারে। যদিও কার্ডিও করেন তাহলে দৌড়াতে হবে। এগুলি আরামদায়ক কাজ নয়।
মারাত্মক অ-আরামদায়ক পরিস্থিতি এটি। আর মানুষ বিড়ালের মতই আরামপ্রিয় ও অলস প্রাণী। সুতরাং, এই ব্যায়াম কর্মটি আসলে মানুষের স্বাভাবিক অলসতা প্রবৃত্তির সরাসরি বিরুদ্ধে যায়। তাই প্রতিবারই এক্সারসাইজে যাওয়ার সময় আপনাকে আপনার চিন্তার একটা অংশ বাঁধা দিতে চাইবে। নানা অজুহাত দেখাবে। তখন আপনাকে পালটা যুক্তি দিয়ে নিজেকে বুঝিয়ে মনস্থ করতে হবে ব্যায়াম কর্মের জন্য।
বক্সিং মাস্টার মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত প্রতিদিন প্র্যাক্টিসের আগে এমন অবস্থায় পড়তেন। সুতরাং, যে যত বড় মাস্টারই হোন না কেন, ইচ্ছাশক্তির উপর প্রবল নিয়ন্ত্রণ না থাকলে নিয়মিত ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
যেহেতু এক্সারসাইজ মাইন্ড তথা চিন্তার সাথে সরাসরি জড়িত, তাই এটি একটি স্টোয়িক ইচ্ছাকৃত অ-আরামদায়ক অবস্থায় নিজেকে ফেলে তৈরী করা। শারীরিক ও মানসিক ভাবে।
বডিবিল্ডিং বা ওয়েট ট্রেনিং এ যে সমস্যাটা খুবই বড় তা হচ্ছে আশাহত হয়ে পড়া এবং আরো আরো উন্নতির জন্য এতো বেশী ব্যগ্র হয়ে পড়া যে, একসময় হতাশায় নিমজ্জ্বিত হওয়া। কোন কিছু অবসেশনের পর্যায়ে চলে গেলে, তা মারাত্মক বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। কেউ কোন বীজ রোপন করলেন, এই বীজ সাত দিন পর চারা হতে শুরু করে। এখন ব্যক্তিটি যদি প্রতিদিন বিশ বার পানি দেন ও ছত্রিশবার দেখেন বীজকে, তাহলে কি গাছ হবে পাঁচ দিনে? হবে না।
এবং এমন তৎপরতা কখনোই স্টোয়িক নয়, বরং তা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, অন্য একটি মোহে পড়া। এই সমস্যাটির কারণে যারা এক্সারসাইজ বা ওয়েটট্রেনিং করেন তাদের বেশীরভাগই কোন স্টোয়িক কাজ করছেন না। স্টোয়িক প্র্যাক্টিস কেউ করতে গেলে এক্সারসাইজের মাধ্যমে, তাকে আগে স্পষ্ট হয়ে নিতে হবে তিনি নিজেকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে শক্ত করার জন্য কাজটি করছেন। অন্য বডি বিল্ডারদের সাথে নিজের তুলনা, নিজের উন্নতির জন্য অতি ব্যগ্র হয়ে যাওয়া, এবং এর জন্য বিভিন্ন সাপ্লেমেন্ট ইত্যাদির দিকে অতি ঝুঁকে পড়া- এসব মোহগ্রস্ত কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। দেখতে হবে, মাইন্ড ও বডির উন্নতি যেন হয় এক্সারসাইজের মাধ্যমে, আপনি যেন মানসিক ভাবে আরো শক্ত হয়ে উঠেন।
জিম করার ইচ্ছা জাগছে মনে