রেসপেক্ট বা এডমায়রেশন মানুষের, বিশেষত পুরুষের একটা মূল চাওয়া।
পিটার সিংগারের একটা লেখা আছে মানুষের লাইফের সফলতা নিয়ে। কখন মানুষের লাইফকে বলা যাবে সফল। তিনি সেখানে প্রাচীন গ্রীসের সফলতার ধারণাটি নিয়েই কথা বলেছেন ও সফলতাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। সংজ্ঞায়িত না বলে ব্যাখ্যা করেছেন বললে বেশি ঠিক হয়।
গ্রীক সেইজ সলোনের একটি কাহিনী আছে। প্রাচীন গ্রীসের [৬ শতকের] সেরা সাতজন মহান জ্ঞানীর একজন তিনি। একবার তিনি গিয়েছিলেন লিডিয়ার রাজা ক্রইসাসের রাজ্যে। ক্রইসাস তখন পনের বছর ধরে রাজত্ব করছেন। রাজা হিসেবে তিনি সফল। রাজ্যে অভাব অভিযোগ নেই। গৃহ বিবাদ নেই। শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান উত্তরসূরি। রয়েছে প্রচুর সম্পদ। সম্পদের জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিখ্যাত।
ক্রইসাস তার সম্পদ ও ক্ষমতা দিয়ে নানা ভাবে সলোনকে মুগ্ধ করতে চাইলেন।
এরপর তিনি যখন রাজ্য ছেড়ে চলে যাবেন তখন রাজা জিজ্ঞেস করলেন, মহান সলোন, আপনার দেখা সবচাইতে সুখই ব্যক্তিটি কি আমি নই?
সলোন মাথা নেড়ে বললেন, না।
রাজা জিজ্ঞেস করলেন, আপনার এমন মতের কী কারণ? আমার তো সব আছে।
সলোন ধীরভাবে বললেন, একজন লোকের ভাগ্যে কী আছে তা বলা যায় না। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন স্পষ্ট মন্তব্য করা যাবে না।
সলোনের কথায় রাজার গর্ব ধাক্কা খেল। তিনি আহত হলেন।
এর কিছুদিন পরে রাজার ছেলেটি মারা গেল। তার অতি সম্পদের কথা সবাই জানত। এই সম্পদের লোভে পারস্যের রাজা আক্রমণ করেন। সম্পদ লুট করে, ক্রসিয়াসকে বন্দী করে নিয়ে যান।
তাকে শূলে চড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন পারস্যের রাজা।
যখন তাকে শূলে চড়ানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ক্রইসাস চিৎকার করে সলোনের নাম বলছিলেন, আর বলছিলেন যে, হ্যাঁ মহাজ্ঞানী সলোন, তুমিই ঠিক ছিলে। আমি অল্পবুদ্ধি রাজা এক, তোমার কথার মর্ম সেদিন বুঝতে পারি নি। আজ সময় আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
পারস্যের রাজার কৌতূহল হল। তিনি ক্রইসাসের কাছে জানতে চাইলেন কী ব্যাপার। ক্রইসাস তাকে সলোনের কাহিনীটি বললেন। শুনে পারস্যের রাজা ক্রসিয়াসকে মৃত্যুদণ্ড থেকে অব্যাহতি দিলেন।
এই গল্প দ্বারা এটাই বুঝানো হয় যে, মানুষের জীবন শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সফলতা বা ব্যর্থতা সম্পর্কে রায় দেয়া যায় না। পিটার সিংগার তখন আরেকটু বিস্তারিত করে বলেন, মরার পরেই তো শেষ না আসলে। মরার পরে আপনার উত্তরসূরিরা আপনাকে কীভাবে স্মরণ করছে, এটিও গুরুত্বপূর্ন।
পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার রীতি মানুষের প্রায় সব সংস্কৃতিতে ছিল। কোন কোন সংস্কৃতিতে পূর্বপুরুষদের দেবতা বানিয়ে পূজো দেয়া হত।
এই পর্যায় পর্যন্ত গিয়েই মানুষের লাইফের সফলতার চক্র সম্পন্ন হয়।
মানে, মৃত্যুর পরে আপনার উত্তরসূরি কিংবা অন্য মানুষেরা আপনার প্রতি সম্মান জ্ঞাপন করছে কি না।
মানুষের মধ্যে এই ধারণা পাকাপোক্ত ভাবে আছে। এইজন্যই মানুষ রেসপেক্ট বা এডমায়রেশন চায়।
এই যে লেখালেখি, অনেক মানব সেবামূলক কাজ, যেগুলি সত্যি সত্যি মানবসেবার জন্য করছেন মানুষেরা, এগুলির পেছনেও আছে প্রেস্টিজ বা রেসপেক্টের আকাঙ্ক্ষা। এটি মানুষের একটি মূল ড্রাইভ।
এর উল্টা নেগেটিভ আকাঙ্ক্ষা হল ডমিনেন্সের আকাঙ্ক্ষা। দুই ভাবে রেসপেক্ট অর্জন করা যায়, এক প্রেস্টিজ থেকে, দুই ডমিনেন্স থেকে। প্রথমটি স্থায়ী হয় কারণ মানুষ নিজ থেকে আন্তরিক ভাবে আডমায়রেশন বেইজড রেসপেক্ট করে। দ্বিতীয়টি আপনার ডমিনেন্স বা ক্ষমতা চলে গেলে নাই হয়ে যায়, কারণ ওটা ছিল জোর করে আদায় করা।
যেসব মানুষের অনেক সম্পদ আছে, অনেক অর্জন আছে, তারাও দেখবেন লোকদের শেখাতে চাচ্ছে। সবাই না, কেউ কেউ। এর কারণ হচ্ছে প্রেস্টিজ ও এর মাধ্যমে রেসপেক্ট পাওয়ার আকাঙ্কা।
রেসপেক্ট অর্জনের জন্য হার্ড ওয়ার্ক করতে হয়। এডমায়রেশন বেইজড রেসপেক্টের জন্য ন্যারো সেলফিশনেসের উপরে উঠে বিগার পিকচার উপলব্ধি করতে হয়।