জিম শুরু করার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো, যখন আপনি খুবই জোরালোভাবে শুরু করলেন, কিছুদিন মারাত্মক জিম করলেন, এবং এরপর ছেড়ে দিলেন। হয়ত ইনজুরি বা অন্য কোন কারণে। এটা হয়ে থাকে। প্রথমে অতি উৎসাহ পরে হতাশার কারণ হয়ে উঠে।
বিয়ে নিয়ে যেসব গবেষকেরা গবেষনা করছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন সাইকোলজিস্ট এলি ফিংকেল। তিনি তার বইতে লিখেছেন, যেসব লোক প্রেম করে বিয়ে করেন বিবাহীত জীবন নিয়ে তাদের আশা থাকে খুব বেশী। ফলে সুখের সময়ে তারা সাধারণ কাপলদের চাইতে দ্বিগুণ আনন্দে থাকেন বলে দেখেছেন গবেষকেরা। আবার কোন দুঃখের সময় বা খারাপ সময়ে তাদের বেদনা বা দুঃখও হয় দ্বিগুণ। ফলে প্রেমের বিয়ে খারাপ সময়ে সাধারণ অন্যসব বিয়ের চাইতে বেশী কষ্টের মধ্য দিয়ে যায়, এবং এইসময় তা টিকিয়ে রাখা হয় চ্যালেঞ্জিং।
মূল ব্যাপারটা এখানে আশা নিয়ে। আশা বেশী হলে উৎসাহ বেশী হয়। সেক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল হলে আনন্দ তো বেশী হবেই। কিন্তু আশানুরূপ ফল না হলে দুঃখও বেশী হয়।
জিমের ক্ষেত্রেও ব্যাপার একই। জিমে উন্নতি আশানুরূপ হবে এমন কোন কথা নেই। কারণ আপনার বডি টাইপ, জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, নিউট্রিশন, বিশ্রাম এবং এক্সারসাইজ এইসবগুলি মিলেই ফলটা তৈরী হয়। তাই খুব বেশী উৎসাহ ও আশা নিয়ে শুরু করা ঠিক না। আশা বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে করা উচিত, এবং উৎসাহও রাখা উচিত এমনভাবে যাতে দীর্ঘদিন সে উৎসাহ বজায় থাকে।
হারুকি মুরাকামি একজন জাপানি লেখক। বিখ্যাত লেখক। তিনি ম্যারাথন দৌড়বিদ। প্রতিদিন দৌড়ান। তিনি তার দৌড় এবং এ সংস্লিষ্ট বিষয় আশয় নিয়ে একটি বই লিখেছেন। বইয়ের নাম হোয়াট আই টক এবাউট হোয়াট আই টক এবাউট রানিং। অর্থাৎ, দৌড় নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি যা বলি। সেখানে একটি জায়গায় তিনি লিখেছেনঃ
“আমি এখন আরো দীর্ঘ দূরত্ব দৌড়াতে চেষ্টা করছি, কত দ্রুত দৌড়াচ্ছি তা আমার কাছে বিষয় না। ঐ দূরত্বটা পর্যন্ত গেলেই আমার হয়, তা আস্তে গেলাম না দ্রুত গেলাম তা নিয়ে ভাবি না। মাঝে মাঝে আবার যখন ইচ্ছা হয় তখন স্পিড বাড়িয়ে দ্রুত দৌড়াই। তখন দূরত্ব কমিয়ে আনি। একেবারে দূর্বল হয়ে কখনো দৌড় শেষ করি না, প্রাণবন্ত থাকা অবস্থাতেই একটা জায়গায় গিয়ে দৌড়টা শেষ করি। যাতে পরদিন এই প্রাণবন্ততা থেকে আবার শুরু করা যায়। এই জিনিস উপন্যাস লেখার জন্যও দরকারী। প্রতিদিন এমন জায়গায় গিয়ে লেখা শেষ করি যখন আমার মনে হয় আমি আরো লিখতে পারব। এটা করলে পরেরদিন কাজ খুবই সুন্দরভাবে শুরু হয় ও সুন্দরভাবে যায়। আমার মনে হয় আর্নেস্ট হেমিংওয়েও এরকম কিছু একটা করতেন। আপনাকে চলতে থাকতে হলে ছন্দটা ধরে রাখতে হবে। দীর্ঘকালীন যেসব প্রকল্প বা কাজ আছে এগুলির জন্য এই পন্থা খুবই দরকারী। আপনাকে ছন্দটা ধরে রেখে, স্পিডটা সেট করে নিতে হবে, তাতেই সব চলতে থাকবে।”
হারুকি মুরাকামি এখানে যে ব্যাপারটি করেছেন, বা আর্নেস্ট হেমিংওয়ে যা করতেন তা হলো নিজেকে প্রতিদিন একেবারে নিঃশেষ করে না দিয়ে পরদিনের জন্য কিছু শক্তি জমা রাখা। এটা এক ধরনের মানসিক টেকনিক। দ্বিতীয়ত এটা একেবারে নিঃশেষ ও দূর্বল হয়ে পড়া থেকে বাঁচায়। মাইন্ডসেট তৈরী করে যে, যে কাজ আমি করছি তা দীর্ঘকালীন, এবং তা ভালোভাবে করে যেতে হবে।
সাধারণত জিম একজন করতে পারেন ৩০-৫০ মিনিট। এই সময়েই যথেষ্ট। সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচদিন। এবং প্রতিদিন একটি মাসল গ্রুপ করে করলেই হবে। আবার পুরো বডির কমপ্লেক্স এক্সারসাইজগুলিও (পুল আপ ইত্যাদি) করতে পারেন।
প্রতি মাসল গ্রুপে পাঁচ/ছয়টা এক্সারসাইজই যথেষ্ট, বিশেষজ্ঞদের মতে।
অনেকে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা এক্সারসাইজ করে যাচ্ছেন। এতে লাভের চাইতে লসই হয় বেশী। মানসিক ভাবে আপনি এতে দূর্বল হয়ে পড়বেন। ওভারট্রেইনিং মাসলের ক্ষতি করবে ও গ্রোথ হবে না। তখন আবার আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন যে এত কষ্ট করার পরও কোন গ্রোথ নেই ভেবে।
তাই, প্রথম কথা হলো, ধীরে কাজ করুন। দীর্ঘকালীন একটি কাজ আপনি করছেন। প্রাণবন্ত এবং শক্তি থাকা অবস্থাতেই ৩০-৫০ মিনিটের মধ্যে এক্সারসাইজ শেষ করুন। অতিরিক্ত করতে যাবেন না অতি উৎসাহী হয়ে। তাতে লাভ কিছু হবে না।