ব্রুস লী, অবশ্যই একজন লিজেন্ডের নাম। বডি বিল্ডিং, স্ট্রেংথ ট্রেইনিং, মার্শাল আর্টস ইত্যাদিকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে গেছেন তিনি। সাধারণত বডি বিল্ডিং বলতে আমরা বুঝি আর্নল্ড শোয়ার্জনেগারের মত কেউ, কিন্তু সব সময় ব্যাপারটা এরকম নয়। ব্রুস লী’র ওজন ছিল প্রায় ১৩৫ পাউন্ডের মত। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখবেন তার মাসলগুলি ছিল স্পষ্টভাবে ডিফাইন করা। আর শক্তির কথা তো বলাই বাহুল্য। স্ট্রেংথ এর ব্যাপারে প্রায় অদ্বিতীয় একজন ছিলেন।
ব্রুস লী ফিল্মে মার্শাল আর্টসকে জনপ্রিয় করেন। মার্শাল আর্টস কেবল শরীর চর্চা নয়, এতে যুক্ত আছে ইস্টার্ন ফিলোসফি। জেন বুদ্ধিজম বা বৌদ্ধ দর্শনের অনেক বিষয় আশয়ের সংস্পর্শ একেক ধরনের মার্শাল আর্টস তৈরী করেছে।
ব্রুস লী নিয়মিত লেখতেন। মার্শাল আর্টস বিষয়ে তার ভাবনা, দর্শন চিন্তা। এগুলি নিয়ে তার বিখ্যাত বই জিত কুনে দু। আরেকটি বই যা তার মেয়ে প্রকাশ করেছেন, নাম উইজডম ফর দ্য ওয়ে। এখানে তার বেশ কিছু কুওট রয়েছে।
স্টাইল নির্মিত হয়েছে অনুমানে
ব্রুস লী’র একটি ভাবনা এমনঃ
“যিনি কোন স্টাইলের মূল নির্মাতা তিনি স্টাইল নির্মানের কালে একটা অনুমান ঠিক করেন। কিন্তু স্টাইল প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে ঐ অনুমানটিই যেন ধ্রুব সত্য হয়ে যায়। সবাই অন্ধভাবে তা অনুসরণ করতে থাকে। একজনের বডি টাইপ কেমন, বডির গঠন কেমন, ইত্যাদি কেউ বিবেচনায় নিতে চায় না। কেবল ঐ স্টাইলটাকে অন্ধভাবে ফলো করা হয়। কিন্তু আমার মনে হয়, এটা ঠিক নয়।”
ব্রুস লী’র এই চিন্তাটি চমৎকার। ওয়েট ট্রেনিং বা এক্সারসাইজ বিষয়ক মেন্টরদের স্টাইল যে সবার জন্য প্রযোজ্য হবে এমন নয়। এমনকী বিজ্ঞানভিত্তিক যেসব গবেষণা হয় তাতেও অনেক সীমাবদ্ধতা রয়ে যায়। যেমন, কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে ল্যাব টেস্ট করা হলো। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের বডি টাইপ ঐ ছাত্রদের মত হবে না হুবহু।
তাই, গবেষণা ফলাফল একটা গড় মান দেয়। এই মান ধ্রুব সত্য নয়, বলা যেতে পারে পরীক্ষামূলক ভাবে পর্যবেক্ষণ করে এ পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ সত্য।
স্টাইল বিষয়ে ব্রুস লী’র কথাটি সাহিত্য, শিল্পের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দেখা যায় কোন সাহিত্য স্টাইলকে অন্ধভাবে অনুকরণের চেষ্টা। কিন্তু যখন আমরা স্টাইলের মূল নির্মাতার ব্যাপারে ভাবব, তিনি যে একটি অনুমান ধরে নিয়েই এগিয়েছিলেন তা ভাববো, তখন আমরা স্টাইলটিকে ধ্রুব বলে ধরে নেব না। প্রয়োজনে নিজেদের মত করে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও কাটছাঁট করে নেব। শিল্প শিল্পীকে এই স্বাধীনতা দেয়।
এক্সারসাইজের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। কোন এক এক্সারসাইজ করতে গিয়ে আপনার অসুবিধা হলে তা করতেই হবে এমন নয়। যেমন, একটা নির্দিষ্ট ওয়েটে বেঞ্চ প্রেস মারতে গিয়ে আপনি অনুভব করলেন কাঁধে ব্যথা অনুভব করছেন। কোন ওয়েবসাইটের কোন এক আর্টিকেলে দেখেছেন ঐ ওয়েটেই মারতে হবে। এখন আপনি কী করবেন?
নিয়ম হলো কিছুই ধ্রুব নয় এখানে, তাই আপনি বেঞ্চ প্রেস মারা সাথে সাথে বন্ধ করবেন। ওয়েট কমিয়ে মারার চেষ্টা করবেন। যদি দেখা যায় তখনো ব্যথা হচ্ছে তাহলে বেঞ্চ প্রেস মারা সেদিন বন্ধ করে দেবেন ও অন্য কোন এক্সারসাইজ করবেন।
এটা না করে আপনি যদি অনলাইনে পড়া আর্টিকেলের বানী ধ্রুব মেনে বেঞ্চ প্রেস মারা চালিয়ে যান, তাহলে খুব সম্ভবত কাঁধের ইনজুরিতে পড়বেন ও দুই তিন সপ্তাহ রেস্টে থাকতে হবে।
বড় ভুল কী
ব্রুস লী’র মতে সবচাইতে বড় ভুল হচ্ছে কোন ফাইটের বা কাজের ফল কী হবে তা নিয়ে ভাবা। আপনি জিতবেন না হারবেন এ নিয়ে ভাববেন না। প্রকৃতিকে এই দায়িত্ব নিতে দিন, এবং আপনার কাজ হলো ঠিক সময়ে আঘাতটা করা।
গীতাতেও প্রায় এইরকম একটি ধারণা আছে। একে বলে নিষ্কাম কর্ম। ফলের ব্যাপারে চিন্তা না করে কাজটা ঠিকঠাক মত নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে করে যাওয়া।
[কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে অধিকার নেই। সকাম কর্ম নিকৃষ্ট, নিষ্কাম কর্ম শ্রেষ্ঠ। হে অর্জুন, যে ব্যক্তি ফলের আকাঙ্ক্ষায় কর্ম করে সে নিকৃষ্ট। ৪৭-৪৭, শ্রীমদ্ভগবদগীতা। ঋণ স্বীকার বাংলাগীতা।
কারণ ফল ভবিষ্যতের উপর, এবং এমন অনেক বিষয়ের উপর নির্ভর করে যা আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল নিজের সর্বোচ্চটা দেয়া কিংবা না দেয়া।
অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়, প্রচুর হয়, যে একজন ব্যক্তি তার সর্বোচ্চটা দিয়েও লক্ষ্যে পৌছাতে পারেন নি অন্য অনেক বিষয়ের প্রভাবে যা তার নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না। এক্ষেত্রে তিনি তার দিক থেকে ব্যর্থ নন। ব্রুস লী’র আরেকটা কথা এখানে বলা যায়, সফলতা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্য নয়, সফলতা হচ্ছে একটি যাত্রা।
Success means doing something sincerely and wholeheartedly. – Bruce Lee
গ্রহণ, বর্জন ও যোগ করা বিষয়ে
ব্রুস লী’র কথায়, নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে রিসার্চ করুন। এর মধ্য থেকে যা দরকারী তা গ্রহণ করুন, যা অদরকারী তা ফেলে দিন, এবং আপনার নিজস্ব যা তা যোগ করুন।
অর্থাৎ, জানুন অনেক, এগুলি নিয়ে ভাবুন। কিন্তু সব গ্রহণ করার কিছু নেই, অদরকারীগুলি ফেলে দিন।
এক্সারসাইজ বিষয়েও তা প্রযোজ্য, যা অদরকারী মনে হয় তা ফেলে দিন। জীবনে এই জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ন একটি কাজ বলে আমার মনে হয়। দরকারী জিনিসগুলি আমরা নিতে পারি না কারণ অদরকারী অনেক ব্যক্তি বস্তু বিষয়ে আমরা ব্যস্ত হয়ে থাকি। অদরকারী অনেক ভাবনা আমাদের দরকারী চিন্তায় বাঁধা দেয়। এই বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী।
যা অপ্রয়োজনীয়, অদরকারী জিনিস ছেঁটে ফেলে দরকারী জিনিসে যাওয়ার চিন্তা পদ্বতিকে ওকামের রেজর নামেও ডাকা হয়। ইংরাজ দার্শনিক উইলিয়াম অফ ওকামের নামানুসারে দেয়া হয়েছে এই নাম।
Nice writeup. Keep it up.