নিজের সাথে যুদ্ধ

জিম আত্মোউন্নয়নের জায়গা। এখানে মূল খেলাটা হচ্ছে আপনার সাথে আপনার। প্রফেশনাল বডি বিল্ডার যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে আলাদা প্রতিযোগীতা হয়, সেটা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু সাধারণ একজন মানুষ যখন জিমে যান তখন তিনি তার নিজের সাথেই নিজের এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এক মাস, দুই মাস বা তিন মাস জিম করার পরে তার আগের “আমি”র সাথে অনেক পার্থক্য রচিত হয়। তাছাড়া, প্রতি সপ্তাহে, বা দিনে তার স্ট্রেংথ বাড়তে থাকে, এই নিজেকে অন্যভাবে খুঁজে পাওয়া, একটা আত্ম আবিষ্কারও।

জিম

হারুকি মুরাকামির তার দৌড় বিষয়ক বইতে ম্যারাথন দৌড় নিয়ে লিখেছেনঃ

“অধিকাংশ সাধারণ দৌড়বিদের আলাদা ব্যক্তিগত লক্ষ্য থাকে, যেমন একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তারা নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব দৌড়াতে চান। এটা করতে পারলে তাদের ভালো লাগে, তারা অর্জনের এক আনন্দ উপভোগ করেন। না করতে পারলে তার মধ্যে এই অনুভূতি কাজ করে যে পারলেন না। কিন্তু না পারলেও তিনি যদি তার সর্বোচ্চটা দিয়ে থাকেন তাহলে এক প্রকার সন্তুষ্টি তার ভেতর কাজ করে, কারণ এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত তিনি গুরুত্বপূর্ন কিছু আবিষ্কার করেছেন নিজের সম্পর্কে, এটা এক অর্জন যা তিনি বয়ে নিয়ে যাবেন পরবর্তী দৌড়ে।”

এখানে নিজের সম্পর্কে আবিষ্কার বলতে মুরাকামি তা বুঝাতে চাচ্ছেন, তা হলো নিজেকে চ্যালেঞ্জ করলে একজন ব্যক্তি হঠাৎই আবিষ্কার করতে পারে তার সত্যিকার ক্ষমতা সম্পর্কে। হয়ত আগে সে নিজেকে আন্ডারএস্টিমেট করেছিল বা অভারএস্টিমেট। এটা এক বড় আবিষ্কার।

ওয়েট ট্রেনিং এর ক্ষেত্রে একই জিনিস। কোন ওয়েট দেখে মনে হতে পারে ব্যক্তির যে সে এটি দিয়ে এক্সারসাইজ করতে পারবে না, তুলতেই পারবে না। কিন্তু কিছুদিনের ভেতর আস্তে আস্তে বাড়াতে বাড়াতে সে সহজেই ওই ওয়েট তুলতে পারে।

প্রতিবার, ধরা যাক প্রতি সপ্তাহে, ওয়েট অল্প অল্প করে বাড়ানো হচ্ছে নিজেকে চ্যালেঞ্জ করে যাওয়া। এতে নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা মিলে।

মুরাকামি আরো লিখেন,

“এটা আমার উপন্যাস লেখালেখি পেশার ক্ষেত্রেও খাটে। উপন্যাস লেখালেখির পেশাতে আমি যতদূর জানি, হারা বা জেতার কিছু নেই। হয়ত কত কপি বই বিক্রি হল, কতো সমালোচকদের প্রশংসা পেল ইত্যাদি দ্বারা বাইরের দিক থেকে সাহিত্যিক অর্জন মাপা যায়। কিন্তু এর কিছুই আসলে সত্যিকার অর্থে কিছু নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হলো আপনি নিজের জন্য যে মানদন্ড ঠিক করে দিয়েছেন তাতে আপনার লেখা পৌছাতে পারল কি না। এই মানদন্ডে পৌছাতে না পারা এমন জিনিস যা আপনি সহজে ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। অন্য লোকদের হয়ত বুঝাতে পারবেন কিন্তু নিজেকে আপনি বোকা বানাতে পারবেন না। এই দিক থেকে দেখলে, ম্যারাথন দৌড় এবং উপন্যাস লেখা একই রকম। মূলত একজন লেখক তার ভেতরের শান্ত অনুপ্রেরণা দ্বারা পরিচালিত হন, বাইরের স্বীকৃতি বৈধতা খুঁজেন না।”

লেখালেখির ক্ষেত্রে নিজের জন্য সেট করে রাখা মানদন্ডটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন, মুরাকামি ম্যারাথনের জন্যও নিজের মানদন্ডের কথা বলেছেন, একইভাবে জিমের জন্য একজন ব্যক্তির মানদন্ডটাই তার কাছে গুরুত্বপূর্ন। কারণ এখানে অনুপ্রেরণা ব্যক্তির ভেতরের, এবং তিনি তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ্য অতিক্রম করে একেবারে প্রথম সপ্তাহ থেকেই সফলতার সাথে এগিয়ে যাবেন। কোন লক্ষ্য অতিক্রম করতে না পারলে নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারনা লাভ করবেন।

ক্রিয়েটিভ লেখালেখি পেশার মত জিমও নিজের ভিতরের অনুপ্রেরণা, ও নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ। আরেকটি জিনিসে লেখালেখির সাথে এর মিল আছে তা হলো, সৃষ্টিশীল লেখালেখি কোন ডেস্টিনেশন নয়। একটা জীবন যাপন প্রণালী। একজন লেখককে লেখার বাইরেও প্রচুর পড়তে হয়। প্রচুর ভাবতে হয়। জীবন যাপনে এই লেখালেখি সংস্লিষ্ট জিনিস নিয়েই থাকতে হয়। এমন হয় না যে একটা উপন্যাস লিখে লক্ষ্য অর্জনের পর তিনি সব ছেড়ে দেন, সাধারনত এমন হয় না। লেখকেরা না লেখলেও পড়া ও নানাবিদ চিন্তা ভাবনার মাধ্যমে লেখার প্রস্তুতি নেন। লেখালেখিটা তাদের জীবন যাপন প্রণালী হয়ে উঠে। জিমও এমনই, কিছুদিন করে একটা নির্দিষ্ট অর্জনের পর ছেড়ে দেবার মত বিষয় নয়। এটিও জীবন যাপন প্রণালী, নিউট্রিশন নিয়ে পড়া, এক্সারসাইজ নিয়ে জানা, মাইন্ডসেট ঠিক রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে জিমও চালিয়ে যেতে হয়।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *