একটা কথা আছে, আমরা যা খাই, আমরা তাই। অর্থাৎ, যে জিনিস আপনি খাচ্ছেন ঐ জিনিসই আপনাকে তৈরী করছে। মানুষ এমন এক যন্ত্র যার হার্ট বিট হয় দিনে ১১৫,০০০ বারের বেশী। যন্ত্রের এই ফাংশনটা অন্তত ভালোভাবে জারি রাখতে ভালো খাদ্য দরকার। সিএনজির আছে গ্যাস, মানুষের জন্য সেই গ্যাস তথা শক্তির উৎস হলো খাবার।
জিমে আপনি যতই চাপাচাপি করেন না কেন, খাবার যদি না দেন বডিকে তাহলে আপনার বডি কখনো গ্রো করবে না।
একসময় আমাদের পূর্বপুরুষেরা বনে জঙ্গলে বাস করতেন। মানুষ তার ইতিহাসের প্রায় ৯৫ ভাগের বেশী সময় বনে জঙ্গলে ছিল, গাছের ছালবাকল পরিধান করত, শিকার-সংগ্রহের দ্বারা দিনাতিপাত করত। সেই সময়ে রাতের এবং শীতকালের ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য, খাদ্যাভাবের সময় টিকে থাকার জন্য আমাদের বডি ফ্যাট জমিয়ে রাখতে শুরু করে। ফ্যাটকে বডি মনে করে বিপদের দিনের সঞ্চয়।
মরু ভল্লুক যারা আছেন তারা খুবই ঠান্ডার দেশে বাস করেন। এন্টার্কটিকা মহাদেশে, যেখানে বরফ আর বরফ। খালি কাপড়ে আমরা গেলে জমে কাঠ হয়ে যাবো। কিন্তু ভল্লুকদের কিছুই হয় না। তারা স্বাভাবিক ভাবেই ওখানে বাস করেন। কারণ তাদের আছে গাঢ় পশম এবং চামড়ার নিচে রয়েছে পুরো চর্বির স্তর।
এসব আমরা সাধারণ বিজ্ঞান বইতে পড়েছি স্কুলে। প্রাণী যখন অসুবিধাজনক জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেছে, তখন কয়েক প্রজন্মের মধ্যে তার দেহ নানা ভাবে অভিযোজিত হয়েছে ঐ অবস্থার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য।
আমাদের দেহ ফ্যাট বা চর্বিকে সম্পদ মনে করে তাই চর্বি আমাদের দেহে জমা হয়। আবার আমাদের দেহ মাসলকে দেখে বোঝা হিসেবে। কারণ মাসল বেশী হলে তাদের জন্য বেশী ক্যালরি তথা শক্তি খরচ হয়।
এখানেও সেই প্রাচীনকালের হিসাব। বিভিন্ন হলিউডি ফিল্মে যেমন দেখে থাকেন আমাদের জংলী পূর্বপুরুষেরা ধুমধাম শিকার করে ফেলে, বাস্তব অর্থে এমন আসলে ছিল না। আমাদের পূর্বপুরুষেরা খুবই শক্তিশালী ছিলেন না, খুবই ভালো দৌড়াতেও পারতেন না। ফলে শিকারে তারা দক্ষ ছিলেন না। মূলত ফলমূল সংগ্রহ করতেন আর মাঝে মাঝে শিকার করতে পারতেন।
সেই শিকারের বস্তু আনা হতো, ও সবাই মিলে তারা তা খেতেন।
এই অবস্থায়, যখন খাদ্য পাওয়া খুব সহজ কিছু না, তখন বডি অযথা শক্তি নষ্ট করা পছন্দ করে নি। তাই মাসলকে তার অপছন্দ করার শুরু।
তাই এখনো মাসল তৈরী করতে হলে আপনাকে এক্সারসাইজ করে মাসলে প্রেশার দিতে হয়, এবং পর্যাপ্ত প্রোটিনসহ অন্যান্য ধরনের খাদ্যবস্তু খেতে হয়। অন্যদিকে ভুড়িতে বা অন্য কোথাও চর্বি বানাতে হলে বেশী খাবার খাওয়া এবং শুয়ে বসে থাকলেই চলবে। বডিকে চর্বি জমানোর জন্য কোন সংকেত দেয়া লাগে না। চর্বি জমাতে হবে এই মিশন তার আগেই ঠিক করা। কারণ আমাদের বডি মনে করে আমরা এখনো সেই জঙ্গলে আছি, খাদ্য পাওয়া হয়ত অনিশ্চিত, হয়ত হিংস্র জন্তুর তাড়া খেয়ে আমাদের অবস্থান বদলাতে হবে।
আমাদের খাদ্য থেকে পাওয়া পুষ্ঠি উপাদানকে বড় পুষ্ঠি উপাদান বা ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস এবং ছোট মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস নামে দুইভাগে ভাগ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বড় পুষ্ঠি উপাদান তিন ভাগে বিভক্ত। যথাঃ
১। প্রোটিন বা আমিষ।
২। কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা।
৩। ফ্যাট/লিপিড বা স্নেহ বা চর্বি।
এই তিন জাতীয় খাদ্য উপাদান আমাদের দেহের জন্যই খুবই দরকারী।
আর ছোট পুষ্ঠি উপদানের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ। সুস্বাস্থ্যের জন্য এগুলিও খুব দরকারী। ভিটামিনের কিছু উদাহরন, এ, সি, ডি, ই, বি১২, কে, বি৬ ইত্যাদি। খনিজের উদাহরন, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি।
যখন আমরা খাদ্য খাই, দেহের ভেতরে গিয়ে তারা শক্তি উৎপাদন করে। এই শক্তিকে ক্যালরি হিসেবে পরিমাপ করা হয়। এর একটা হিসাব হলো এরকমঃ
১ গ্রাম প্রোটিন = ৪ কিলোক্যালরি।
১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট = ৪ কিলোক্যালরি।
১ গ্রাম ফ্যাট = ৯ কিলোক্যালরি।
এবং দেহে আপনার ১ পাউন্ড ফ্যাট থাকলে ধরতে হবে এর ক্যালরি হিসাব ৩৫০০ কিলোক্যালরি। (আসলে কিলোক্যালরি হলেও ক্যালরি বলা হয়ে থাকে। ১ কিলোগ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়াতে যে তাপ বা শক্তি লাগে সেই পরিমানকে এক কিলক্যালরি বলা হয়।)
এখন আপনি যদি চান এক পাউন্ড ফ্যাট কমাতে এক সপ্তাহে তাহলে কী করতে হবে?
ধরা যাক, আপনার প্রতিদিন ১৫০০ ক্যালরি লাগে জীবন যাপন করতে। (কত ক্যালরি লাগে তা বয়স, উচ্চতা, ওজন এবং এক্টিভিটির উপর নির্ভর করে এবং খুব সহজেই এই ক্যালকুলেটর চেপে বের করতে পারবেন।)
তো, ১৫০০ ক্যালরি লাগে, কিন্তু আপনি খাবেন ১০০০ ক্যালরির খাদ্য। ৫০০ ক্যালরি কম খাবেন। তখন আপনার বডি তার জমানো চর্বি থেকে তা বার্ন করতে শুরু করবে, এবং ৭ দিনে দাঁড়াবে ৩৫০০ ক্যালরি। অর্থাৎ, আপনি এক পাউন্ড চর্বি লস করলেন।
এই ৫০০ ক্যালরি কম খেয়ে এক সপ্তাহে এক পাউন্ড চর্বি লসের কথাটি আসলে গড় একটি কথা, ব্যক্তিভেদে ক্যালরি কম খাওয়ার পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে নির্দিষ্ট পরিমান ফ্যাট লসের জন্য।
আর কম ক্যালরি খেয়ে ফ্যাট লস করতে গেলে আপনার মাসল ম্যাসও কমবে। মেটাবোলিজম রেইট কমবে। তাই ক্যালরি খুবই কমিয়ে দেয়া ঠিক নয়।
ফ্যাট লসের জন্য ক্যালরি কম নেয়ার সাথে সাথে দরকার এক্সারসাইজের, যাতে মাসল ম্যাস না কমে ও মেটাবোলিজম রেইট কমে না যায়। এক্সারসাইজের ফলে ফ্যাট লস প্রক্রিয়া হয় দ্রুত।
এই পোস্ট প্রাথমিক নিউট্রিশনের ধারনা নিয়ে, ফ্যাট লস নিয়ে নয়, তবুও একটা কথা এখানে বলতে হয়। অনেকে মনে করেন সিট আপ মারতে মারতে ভুড়ির মেদ কমিয়ে ফেলবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট জায়গায় চর্বি এভাবে কমানো যায় না। পুরো বডির চর্বি কমতে থাকবে এক্সারসাইজের ফলে, এবং একসময় ভুড়ির ফ্যাট কমা শুরু হবে। তাই যখন সিট আপ মারছেন কেউ, তখন ভুড়ির মেদ নয় তার জন্য জায়গায় ফ্যাট জমা থাকলে আগে সেগুলি কমবে।
আর সিট আপ ও কার্ডিওর চাইতে ওয়েট লিফটিং ফ্যাট কমানোর জন্য ভালো উপায়। কারণ ওয়েট লিফটিং মাসল ম্যাস বাড়ায়, মেটাবোলিজম রেইট বাড়ায় এবং এতে বেশী ক্যালরি বার্ন হয়।
ব্যতিক্রমী। তাই ভালো লাগছে পড়তে