এ কথা আমির খানের ভক্ত বা অভক্তরা মানতে বাধ্য হবেন যে অভিনেতা হিসেবে তার ওয়ার্ক এথিক অসাধারণ পর্যায়ের। দঙ্গল মুভির জন্য তার বডি টান্সফর্মেশন ছিল অতি উচ্চ মানের। দঙ্গল মুভিতে অভিনয়ের জন্য তিনি ২৮ কেজি ওজন বাড়ান পাঁচ মাসে। ৯৮ কেজি ওজন, ৩৮ পার্সেন্ট বডি ফ্যাট নিয়ে এক অংশ শ্যুটিং করেন। এরপর তিনি ওজন কমাতে থাকেন ও পাঁচ মাসে ৯ পার্সেন্ট বডি ফ্যাটযুক্ত প্যাক বডি তৈরী করেন বাকী অংশে অভিনয়ের জন্য। পরিচালক তাকে বডি স্যুট পরে অভিনয় করার অফার দিলেও তিনি নিজের বডি নিয়েই অভিনয় করতে চান। বড় সুপারস্টার হয়েও তার ডেডিকেশন অবশ্যই দেখার মতো।
এখন এইরকম বডি ট্রান্সফর্মেশন কিন্তু সবার হবে না। অনেকে বলতে পারেন আমির খান নায়ক, তিনি নানা সাপ্লেমেন্ট ও ফিটনেস এক্সপার্টদের সাহায্য নিয়েছেন। তা ঠিক আছে, কিন্তু তা কেবল সাহায্যই। সাপ্লেমেন্ট কাজ করে দেবে না, সাহায্য করবে কেবল। নিজের পরিশ্রম, ও নিয়ন্ত্রণই প্রথম ও প্রধান। সাপ্লেমেন্ট ম্যাজিক ল্যাম্পের মতো কাজ করলে যার সাপ্লেমেন্ট কেনার টাকা আছেই সেই সিক্স প্যাক ও মাসল ম্যাসযুক্ত হয়ে যেত রাতারাতি। এমন কখনো হয় না।
এখানে কয়েকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ন, যা জেফ ক্যাভেলিয়ার তার ইউটিউব ভিডিওতে খোলাসা করে দিয়েছেন। জেফ ক্যাভেলিয়ার একজন অসাধারন ফিটনেস এক্সপার্ট, তার চ্যানেলের নাম এথলিন এক্স।
গুরুত্বপূর্ন বিষয় একঃ
আমির খান পাঁচ মাসে যে নিজের ওজন ২৮ কেজি বাড়িয়েছিলেন ওটাই ছিল তার কাছে অস্বাভাবিক বিষয়। কারণ এমনিতে খান একজন ফিট মানুষ। খাবার সহ লাইফের প্রতি তার নিয়ন্ত্রণ ছিলো। তাই খেয়ে বাড়ানোটাই তার কাছে ছিল অসুবিধাজনক বিষয়।
যারা পাঁচ বছর, দশ বছর ধরে এমন বেশী ওজনদারী আছেন তাদের এই নিয়ন্ত্রণ নেই খাবারের প্রতি বা নিজের প্রতি। ফলে আমির খানের ওজন কমাতে যত কম সময় লেগেছে, যে পরিশ্রম তিনি করতে পেরেছেন তা দশ বিশ বছর ধরে ওজনদারী থাকা কেউ পারবেন না।
আমির খানের কথায়, “ডায়েট হচ্ছে এক নাম্বার। আপনি যদি খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে যতই এক্সারসাইজ করেন কোন লাভ হবে না।”
এখানে খাবারের ক্ষেত্রে অন্যদের অনেক কষ্ট করতে হবে। দশ বিশ বছর ধরে ওজনদারী যিনি তার খাবারের অভ্যাস খুব সম্ভবত বাজে। এই দীর্ঘদিনের অভ্যাস সহসা তিনি ছাড়তে পারবেন না, প্রচুর নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা অর্জন করতে হবে।
অন্যদিকে আমিরের দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছিল স্বাস্থ্যকর খাবারের। তাই তিনি পাঁচ মাসের জোর করে করা বদ অভ্যাস দূর করতে সক্ষম হয়েছিলেন সহজেই।
গুরুত্বপূর্ন বিষয় দুইঃ
আমির খান এক্সারসাইজ ও মাসল বিল্ডিং এর সাথে ভালো রকম পরিচিতই ছিলেন। তিনি তার ফিল্ম গজনীর (২০০৮) জন্য প্রচুর পরিশ্রম করেন জিমে এবং মাসলম্যাস যুক্ত বডি তৈরী করেন।
এরপর থ্রি ইডিয়টস (২০০৯) ফিল্মের জন্য আবার মাসল ম্যাস কমান।
এরপর আবার ধুম থ্রি (২০১৩), পিকে (২০১৪) ফিল্মের জন্য বডি বিল্ডিং করেন।
অর্থাৎ, মাসল বিল্ডিং, ওয়ার্ক আউট এগুলিতে তার অভ্যাস ছিল। খাবার এবং তার লাইফের উপর তার নিয়ন্ত্রণ বেশী।
ফলে দঙ্গলের জন্য পরিশ্রম করা তার জন্য খুব এমন কষ্টকর কিছু হয় নি, যেমন হবে নতুন শুরু করা একজনের কাছে।
এছাড়াও, তার বডি তাকে ওজন কমাতে সাহায্য করেছে। কারণ দীর্ঘদিনের জন্য তিনি মোটা ছিলেন না। বডি তার এক্সারসাইজ ও ডায়েটে দ্রুত সাড়া দিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরতে সাহায্য করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ওজনদারী থাকা কেউ একইরকম এক্সারসাইজ ও ডায়েট অনুসরন করলেও তিনি সেই সাড়া নাও পেতে পারেন।
কিন্তু এখানে অবশ্য ওজনদারীদের আশাহত হবার কিছু নেই। কারণ ফিট থাকা সহজ কিছু না। সহজ হচ্ছে আনফিট থাকা। ফিট থাকতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই পরিশ্রম করতে হবে। সপ্তাহে চার পাঁচদিন জিমে যেতে হবে বছর বছর ধরে। এবং খাদ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আমির খানের নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে কেউ অনুপ্রাণিত হতে পারেন। নিজের বাজে খাবার অভ্যাস ও অলসতার অভ্যাস ঝেড়ে ফেলতে আগ্রহী হতে পারেন। খানের মতো দ্রুত ফল প্রত্যাশা করলে তিনি হতাশ হবেন। কিন্তু তা না করে তিনি যদি নিজেকে ঠিক শেইপে আনতে পরিশ্রম করে যান, খাবার নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করেন, তাহলে তিনি তার লক্ষ্যে পৌছাতে সক্ষম হবেন।
অর্থাৎ, আমির খানের ট্রান্সফর্মেশন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণেরই শিক্ষা দেয়।