লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করে যাওয়া ভাল, এবং লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যাপারে আপনি পজেটিভ থাকলে অবশ্যই তা কার্যকরী, কিন্তু এখানে একটি বড় সমস্যা রয়েছে। যখন আপনি চিন্তা করবেন আপনার লক্ষ্যটি সম্পর্কে, হতে পারে তা কোন ড্রিম জব বা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার, ওয়েটলস ইত্যাদি, তখন আপনি কল্পনা করতে থাকবেন যে আপনি জিতে গেছেন। ব্রেইন সাথে সাথে সে মধুর কল্পনাটি আপনার সামনে হাজির করবে। আপনি নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন, অথবা আয়েসী ভঙ্গিতে ড্রিম জব করে যাচ্ছেন, ওয়েটলস করে ছবি তুলছেন ইত্যাদি। কিন্তু সাইকোলজির গবেষণা অনুযায়ী আপনার এমন কল্পনা আপনার লক্ষ্যে পৌছানোকে আরো কঠিন করে তোলে।
কীভাবে কঠিন করে তোলে?
আপনি কল্পনা করার সময় আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে কী কী বাঁধার সম্মুখীন হবেন, কত বেশী পরিশ্রম করতে হবে, কতবার ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা আছে ইত্যাদি বাস্তব বিষয়গুলি এড়িয়ে যান।
কিন্তু বাস্তব জীবনে যখন কাজ করতে শুরু করেন তখন বাস্তবতার মুখোমুখি হন। দেখা যায় আপনি বাঁধার মুখে পড়েছেন, পরিশ্রম করতে হচ্ছে বা ব্যর্থ হচ্ছেন, এক্ষেত্রে আপনার মনোবল ভেঙ্গে যাবে। কারণ আপনি লক্ষ্য নিয়ে কল্পনা করার সময় খালি জিতে যাওয়ার সময়টা নিয়েই ভেবেছেন, জেতার জন্য তৈরী হবার সময়ের বাঁধা ইত্যাদি নিয়ে আগে থেকে ভাবেন নি। ফলে এগুলি আপনাকে হতাশ করে দেবে সহজেই এবং আপনি ব্যর্থ মনোরথে লক্ষ্য ছেড়ে দিবেন।
পেনিসেলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্যাব্রিয়েল ওটিংগেন ও থমাস ওয়াডেন তাদের গবেষণা পেপারে [১৯৯১] দেখিয়েছেন,
১। লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যাপারে পজেটিভ থাকা ভালো।
২। কিন্তু লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যাপারে যত বেশী পজেটিভ কল্পনা থাকবে লক্ষ্যে পৌছানো হবে তত কঠিন।
৩। লক্ষ্যে পৌছানোর ব্যাপারে কারো আশা যদি থাকে নেগেটিভ এবং লক্ষ্যের ব্যাপারে কল্পনা তাকে পজেটিভ তাহলে তার ব্যর্থ হবার সম্ভাবনা বেশী।
এখন জিমের ক্ষেত্রে এই রিসার্চের প্রয়োগ কেমন? ধরা যাক, আপনি নির্দিষ্ট ধরনের বডি বানাতে চাইছেন, ধরা যাক সিক্স প্যাক। এ নিয়ে যদি আপনি পজেটিভ থাকেন, হ্যা আপনি আশাবাদী, আসলেই পারবেন, তাহলে আপনার সিক্স প্যাকের সম্ভাবনা বেশী।
দ্বিতীয়ত, আপনি যদি কল্পনা করতে থাকেন আপনার সিক্স প্যাক হয়ে গেছে, পোজ দিয়ে ছবি তুলছেন, ইত্যাদি এইসব পজেটিভ ফ্যান্টাসী আপনার সিক্স প্যাক অর্জনের লক্ষ্যকে কঠিন করে দেবে। কারণ এক্ষেত্রে আপনি এড়িয়ে যাচ্ছেন এই জিনিস অর্জনের জন্য আপনাকে কত পরিশ্রম করতে হবে।
তৃতীয়ত, আপনি যদি ভাবেন সিক্স প্যাক আসলে হবে না আপনার, অর্থাৎ লক্ষ্যের ব্যাপারে আপনি আশাবাদী নন, আবার কল্পনা করেন আপনার সিক্স প্যাক হয়ে গেছে, পোজ দিয়ে ছবি তুলছেন, ইত্যাদি পজেটিভ ফ্যান্টাসী; এক্ষেত্রে আপনার সিক্স প্যাক তথা লক্ষ্য অর্জনের সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে।
আশা এবং কল্পনা বা ফ্যান্টাসীর প্রভাব ভিন্ন হয় আমাদের উপরে। তাই জিমে আপনার যে লক্ষ্য আছে তার ব্যাপারে আশাবাদী থাকুন। কিন্তু এ নিয়ে কল্পনা করার সময় নেগেটিভ কল্পনা করুন। সিক্স প্যাক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ছবি তুলছেন এ ধরনের পজেটিভ কল্পনার চাইতে কল্পনা করুন আপনি সিক্স প্যাকের জটিল এক্সারসাইজগুলি করে যাচ্ছেন, ফ্যাটযুক্ত সুস্বাদু খাবারগুলি এড়িয়ে যাচ্ছেন ইত্যাদি। এই ধরনের কল্পনা আপনাকে লক্ষ্যে পৌছাতে সাহায্য করবে।
জিমের জন্য কেবল না, অন্য যেকোন লক্ষ্যের জন্যও এটা প্রযোজ্য। নেগেটিভ কল্পনা, বা লক্ষ বিষয়ে বাস্তব কল্পনা বাস্তবতার জন্য ব্যক্তিকে তৈরী করে। তখন লক্ষ্যে পৌছানোর মিশনে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হলে সহজে ভেঙ্গে পড়ে না।
এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ন স্টাডি আছে নোবেল বিজয়ী মনস্তাত্ত্বিক ড্যানিয়েল কায়নেম্যানের ও অর্থনীতিবিদ এঙ্গাস ডিটনের। গ্যালাপ এর ডাটা ভিত্তিক সেই গবেষনায় তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন যে, যদি কারো বড় লক্ষ্য থাকে তাহলে তার অসুখী হবার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু ছোট ছোট লক্ষ্য থাকলে, এবং সেগুলি সে পূরণ করে যেতে থাকলে ব্যক্তিটি সুখী হয়।
কারণ ব্যক্তির সুখ লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে না, করেন তার লাইফ ইভালুয়েশনের উপর। অর্থাৎ সে তার জীবনকে সফল না ব্যর্থ মনে করে এর উপর। একজন ব্যক্তির যদি লক্ষ্য থাকে পৃথিবীর সেরা লেখকের স্বীকৃতি পাওয়া, এটা খুব বড় লক্ষ্য। এক্ষেত্রে তার হতাশ হবার সম্ভাবনা বেশী।
কিন্তু একজন ব্যক্তির যদি ছোট ছোট লক্ষ্য থাকে, যেমন দোকানের সেল এই সপ্তাহে হয়েছে পাঁচশ টাকা, আগামী সপ্তাহে ছয়শ করা, আগামী বছরে একটা ভালো বই লেখা, এ সপ্তাহে যত কেজি ওয়েট দিয়ে বেঞ্চ প্রেস মেরেছি আগামী সপ্তাহে আরো পাঁচ কেজি বাড়ানো ইত্যাদি খুবই ছোট ছোট লক্ষ্য, তখন তার লক্ষ্য পূরণের সম্ভাবনা বেশী, এবং তার সুখী হবার সম্ভাবনাও বেশী।
জিমে তাই ছোট ছোট লক্ষ্য রাখুন। বড় লক্ষ্য একটা তো সামনে আছেই (তাও যেন বাস্তবসম্মত হয়), সেটা রেখেই আরো ছোট ছোট লক্ষ্য রেখে সপ্তাহে সপ্তাহে সেগুলিই অতিক্রম করে যান। এগুলি অনুপ্রেরণা জুগাবে।
দারুণ